কাপ্তাই লেকের গুলশা মাছের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য:
গুলশা মাছ (Gulsha Fish) যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Mystus cavasius' দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনপ্রিয় মিঠা পানির মাছ। ইংরেজিতে এদেরকে Day's Mystus নামে নামকরণ করা হয়। স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এই সকল বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য গুলশা মাছ বাংলাদেশের মিঠা পানির মৎস্যসম্পদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারের নদী ও জলাশয়ে পাওয়া যায়। সাধারণত পানির উপরিস্থানে এ মাছগুলো বসবাস করে থাকে।
বাংলাদেশের ছোট মাছগুলোর মধ্যে গুলশা মাছ অন্যতম। আবহমান কাল থেকে এ অঞ্চলের মানুষদের নিকট খুব প্রিয় একটি মাছ হিসেবে সমাদৃত। খেতে ভীষণ সুস্বাদু এই জনপ্রীয় মাছটি একটি সময় এ দেশের নদ-নদী ও বিভিন্ন হাওড়-লেকে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেত। কিন্তু নানা ধরণের অপরিকল্পিত কার্যক্রমের ফলে এ মাছটির প্রাপ্যতা দারুণভাবে হৃাস পায়। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে গবেষণার মাধ্যমে এ প্রজাতির মাছটি চাষে সফলতা লাভ করেও পূর্বের প্রাকৃতিক-ন্যাচাড়াল দেশি মাছগুলো আর তেমন দেখা মেলেনি। তাই আমরা কাপ্তাই লেক থেকে সরাসরি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা পূর্বের সে সমস্ত মাছগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি যা আজ বিলুপ্তপ্রায়!
গুলশা মাছের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য:
এ মাছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ ও অণুপুষ্টি বিদ্যামান থাকে। দেহের আকারে গুলশা মাছ সাধারণত ১৫-২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে উপযুক্ত পরিবেশে এরা আরও বড় হয়ে উঠতে পারে। এটি দেখতে ট্যাংড়া মাছের মতো হলেও আকারে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। এর দেহের রঙ সাধারণত ধূসর থেকে বাদামি হয়, এবং পেটে সাদা রঙ দেখা যায়। এদের দেহ লম্বা-সরু হয় এবং মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট ও মুখে দুটি বড় শুঁটি থাকে। এরা লেকের বিভিন্ন নদী, পুকুর, খাল ও অন্যান্য মিঠা পানির জলাশয়ে বসবাস করে। এ মাছগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা জলের তলদেশে বিচরণ করে এবং রাতে বেশি সক্রিয় থাকে।
খাদ্যাভ্যাস ও প্রজনন:
এ মাছটি সর্বভুক (omnivorous)। পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদ এবং ডিট্রিটাস খেয়ে বেঁচে থাকে। গুলশা মাছের প্রজনন মৌসুম সাধারণত বর্ষাকালে হয়, যখন পানির স্তর বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে তারা উপযুক্ত স্থান খুঁজে ডিম পাড়ে।
কাপ্তাই লেকের গুলশা মাছের উপকারীতা:
এ মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি। গুলশা মাছ বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটি প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ।
হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়ামের চাহিদা অত্যান্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যা গুলশা মাছের মধ্যে থাকা এ গুরুত্বপূর্ণ ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরণ করে থাকে। এতে শিশুদের জন্য যে সকল উপকারী রয়েছে, এর অন্যতম—
১.প্রোটিন ২.আয়রন ৩.ক্যালসিয়ম ৪.ফসফরাস ৫.ভিটামিন—সি ৬.ভিটামিন বি-৩ ও ভিটামিন—ডি।
প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে পাওয়া যায়—
আমিষ ১৯.২ গ্রাম, লৌহ ০.৩০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.২৭ গ্রাম, চর্বি ৬.৫ গ্রাম, শর্করা ১.১ গ্রাম ও ফসফরাস ০.১৭ গ্রাম।
এ সমস্ত ভিটামিনসমূহ আমাদের শারিরীক গঠন মজবুত করে তোলে। এ মাছটিতে কাঁটা খুব কম ও ছোট হওয়ায় সকলের নিকট প্রিয়।
কেন খাবেন!
গুলশা মাছ (ওয়াক্স গোরামি বা Trichogaster pectoralis) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এর কিছু প্রধান উপকারিতা হলো:
1. *উচ্চ প্রোটিন*: গুলশা মাছ প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা শরীরের পেশী গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে।
2. *ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড*: এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক।
3. *ভিটামিন ও মিনারেল*: গুলশা মাছ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (যেমন: ভিটামিন এ, ডি) ও মিনারেলে (যেমন: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস) পরিপূর্ণ, যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
4. *কম চর্বি*: এটি কম চর্বিযুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক।
5. *হজম সহজ*: গুলশা মাছ সহজে হজম হয়, তাই এটি যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার।
গুলশা মাছ নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। এছাড়াও এতে রয়েছে আরো নানাবিধ উপকারীতা।