কাপ্তাই লেকের পাবদা মাছের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ:
উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে কাপ্তাই লেকের ৩ প্রজাতির পাবদা মাছ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো— কাপ্তাইয়ের বোয়ালি পাবদা, মধু পাবদা ও ক্ষুদি পাবদা। বৈজ্ঞানিকভাবে এদের নাম দেয়া হয়েছে Ompok pabda, ইংরেজিতে Butter Catfish বলা হয়। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় 'বাটারফিশ' হিসেবে পরিচিত।
সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য:
এ মাছের দেহ চকচকে, আঁইশ বিহীন, উজ্জ্বল রূপালী বর্ণের, দেহের বাহ্যিকভাবে ধূসর রূপালী ও পেটের দিকে রূপালী বর্ণের + দুই জোড়া গোঁফ থাকে, এটি ক্যাটফিশ শ্রেণীভুক্ত। এদের দৈর্ঘ্য পরিপক্ক অবস্থায় ১৫-২৫ সে.মি. হয়ে থাকে। পাবদা মাছ ১ বছরে পরিপক্কতা লাভ করে। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সরবরাহ কম থাকায় এটির মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়।
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য মাছ-উৎপাদন বৃদ্ধিকরণের বিকল্প নেই। আমাদের এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক জলাশয়ের পূর্বে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ছোট মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু প্রাকৃতিক জলাশয়ে অন্যান্য ছোট প্রজাতির মাছের ন্যায় পাবদা মাছ প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। গবেষকরা এর প্রধাণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ মনে করেন— মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়া, পানি শুকিয়ে মাছ স্বীকার করা ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য!
এ ধরনের সুস্বাদু ও পুষ্টি-সমৃদ্ধ মাছের প্রাচুর্যতা ধরে রাখতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে চাহিদা সম্পন্ন এই কাপ্তাই লেকের ফ্রেশ দেশি পাবদা মাছটির উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পাহাড় থেকে টিম চাষমুক্ত–প্রাকৃতিকভাবে কাপ্তাই লেকের ছোট-বড় বিভিন্ন মাছের মধ্যে বিশেষভাবে পাবদা মাছ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
কেন আমাদের কাপ্তাইয়ের পাবদা মাছ শ্রেষ্ঠ?
০. –পাহাড়ি প্রান্তে উম্মুক্ত জলধারায় ক্লিন পানিতে বসবাস করে।
১. –কাপ্তাই লেকের পাবদা মাছ নোংরা দূষণ পানি থেকে মুক্ত, তাই এরা সর্বদা লেকের প্রাকৃতিক ফ্রেশ খাবার গ্রহণ করে থাকে।
২. –আমাদের মাছগুলো নিজস্ব ধরণ অনুযায়ী লেকের বিভিন্ন প্রান্তে ন্যাচারাল উন্নত খাদ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে থাকে।
৩. –কাপ্তাইয়ের পাবদা স্বাদের দিক থেকে দুর্দান্ত!
৪. –এ মাছের নরম মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিগ্রাহী।
৫. –এটি নিয়মিত খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায়।
৬. –কাপ্তাইয়ের পাবদায় যে সমস্ত পুষ্টিগুন থাকে— প্রোটিন, ভিটামিন, ওমেগা-৩ অংশীদার অমিগা ফ্যাট, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ইট সি। এ পুষ্টি উপকরণ খুব সহজে শরীরের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে কার্যকর ও মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
৭. কৃত্রিম প্রজননের জন্য কোন প্রকার ইনজেকশন প্রদান করা হয় না।
পাবদা মাছের ( pabda fish ) উপকারীতা:
-প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন ১৯.২, ফ্যাট ২.০, লোহা ০.২ গ্রাম ও ক্যালসিয়াম ৪০২, ফসফরাস ২১৬ মি.গ্রা. ও পানি ৭৯.৩ অংশ থাকে।
-পাবদা মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ,প্রোটিন ,ভিটামিন B১২, আয়রন ও জিঙ্কে সমৃদ্ধ !
-এই ধরণের মাছগুলোতে স্নেহ পদার্থ কম থাকে।
-প্রচুর ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে, আর এদের কাঁটাগুলো হয় খুবই নরম।
-পাবদা মাছে আরো রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফরাস ও আয়োডিন!
-রয়েছে চর্বি, এজন্যে এ মাছের ক্যালোরি মূল্য অনেক বেশি।
-মানব দেহের প্রচুর পরিমাণে আমিষের প্রয়োজনীয়তা পাবদা মাছ থেকে পাওয়া যায়।
-পাবদা মাছে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ।
-এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম! আমাদের শরীরের দাঁত এবং হাড় গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করে।
-এছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে, দৈহিক গঠনে সাহায্য করে থাকে।
কেন খাবেন?
পাবদা মাছ দক্ষিন এশিয়ার স্থানীয় কাটফিশের একটি প্রজাতি। যেহেতু মাছটি হাওর অঞ্চলের, তাই এই পাবদার স্বাদ এক কথায় অমৃত!
এটি আমাদের মধ্যে অতি জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি মাছ। অধিকাংশ মানুষ কাপ্তাই লেকের পাবদা খেয়ে থাকে এর অন্যতম প্রোটিন উৎস ও স্বাদে অন্যান্য হওয়ায়। এ মাছটি ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য পুষ্টিগত উপকরণে সমৃদ্ধ! পাবদা মাছ খেলে দেহের পেট, ত্বক, চোখ, মাথা, হাড়, নাক ও হৃদয়কে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
এদের দেহে তেমন কোন কাটা নেই, তাই এটি খেতে অনেকের জন্য সুবিধা হয়।
এতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ও আয়োডিন থাকে, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে উপকারী। এ মাছের ক্যালরিমূল্য তুলনামুলক অনেক বেশি, তাই আমাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে থাকে। যারা অল্প কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাদের জন্য এ মাছটি বেশ কার্যকরী হতে পারে।
যথেষ্ট পরিমান ফসফরাস থাকায় শরীরে একাধিক ঘাটতি পূরণ করে থাকে। যাদের হার্টের প্রভলেম রয়েছে, তারা নিয়মিত কাপ্তাইয়ের পাবদা মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
তাই সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবন গঠনে নিয়মিত পাবদা রাখুন আপনার খাবার তালিকায়। ধন্যবাদ!